পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার

 পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার, যা সোমপুর মহাবিহার নামেও পরিচিত, বাংলাদেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এবং বিখ্যাত প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান। এটি নওগাঁ জেলার বদলগাছি উপজেলার পাহাড়পুর গ্রামে অবস্থিত। পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার একটি প্রধান বৌদ্ধ মঠ ছিল এবং এর স্থাপত্য, শিল্প ও ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।

পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহারের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি

অবস্থান

অবস্থান: পাহাড়পুর গ্রাম, বদলগাছি উপজেলা, নওগাঁ জেলা, বাংলাদেশ

দূরত্ব: নওগাঁ শহর থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার এবং ঢাকার প্রায় ২৮০ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে

ইতিহাস

পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার ৮ম শতাব্দীতে পাল সাম্রাজ্যের দ্বিতীয় রাজা ধর্মপাল নির্মাণ করেন। এটি প্রাচীন বঙ্গ ও মগধ অঞ্চলের মধ্যে সবচেয়ে বড় বৌদ্ধ বিহার এবং এর সময়ে এটি একটি প্রধান শিক্ষাকেন্দ্র ছিল। সোমপুর মহাবিহার হিসেবে পরিচিত এই বিহারটি পাল শাসকদের সময়কালে শিক্ষার, ধর্মের এবং সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রস্থল ছিল।

পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহারের স্থাপত্য

প্রধান মঠ

পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহারের প্রধান স্থাপত্য আকর্ষণ হল এর কেন্দ্রীয় মঠ। এটি একটি বৃহৎ ক্রুশাকৃতি মঠ যার চারপাশে প্রাচীর বেষ্টিত। মঠটির কেন্দ্রীয় অংশে একটি প্রধান মন্দির রয়েছে এবং চারপাশে প্রায় ১৭৭টি ছোট কক্ষ রয়েছে যা ভিক্ষুদের থাকার জন্য ব্যবহৃত হত।

টেরাকোটা ফলক

পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহারের দেয়ালে বিভিন্ন টেরাকোটা ফলক রয়েছে, যা প্রাচীন বাংলার শিল্প ও সংস্কৃতির অনন্য নিদর্শন। এগুলি বৌদ্ধ ধর্মীয় কাহিনী, জীবজন্তু, ফুল-পাতা, এবং নৃত্যরত মূর্তির চিত্র প্রদর্শন করে।

প্রত্নতাত্ত্বিক খনন

পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহারে বিভিন্ন প্রত্নতাত্ত্বিক খননকাজ চালানো হয়েছে এবং এখান থেকে প্রচুর মূর্তি, শিলালিপি, মুদ্রা এবং অন্যান্য নিদর্শন পাওয়া গেছে। এগুলি বর্তমানে বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরে সংরক্ষিত রয়েছে।

পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহারের গুরুত্ব

শিক্ষাকেন্দ্র হিসেবে

পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার পাল সাম্রাজ্যের সময়ে একটি প্রধান শিক্ষাকেন্দ্র ছিল। এখানে বৌদ্ধ ধর্ম, দর্শন, বিজ্ঞান এবং অন্যান্য বিভিন্ন বিষয়ের উপর শিক্ষা প্রদান করা হত।

বিশ্ব ঐতিহ্য

পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার ১৯৮৫ সালে ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এর প্রত্নতাত্ত্বিক এবং ঐতিহাসিক গুরুত্বের কারণে এটি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত।

পাহাড়পুর ভ্রমণ তথ্য

কীভাবে যাবেন

ঢাকা থেকে নওগাঁ: ঢাকা থেকে নওগাঁ যাওয়ার জন্য বাস বা ট্রেনের ব্যবস্থা রয়েছে।

নওগাঁ থেকে পাহাড়পুর: নওগাঁ শহর থেকে পাহাড়পুর যাওয়ার জন্য স্থানীয় যানবাহনের ব্যবস্থা রয়েছে।

থাকার ব্যবস্থা

পাহাড়পুরের আশেপাশে বিভিন্ন হোটেল এবং অতিথিশালা রয়েছে। এছাড়া নওগাঁ শহরেও উন্নত মানের হোটেল পাওয়া যায়।

ভ্রমণের সেরা সময়

শীতকাল (নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি) পাহাড়পুর ভ্রমণের জন্য আদর্শ সময়। এ সময়ে আবহাওয়া আরামদায়ক থাকে এবং পর্যটকদের জন্য ভ্রমণ সহজ হয়।

উপসংহার

পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার বাংলাদেশের একটি অমূল্য ঐতিহাসিক এবং প্রত্নতাত্ত্বিক সম্পদ। এর সমৃদ্ধ ইতিহাস এবং স্থাপত্য পর্যটকদের জন্য একটি বড় আকর্ষণ। পাহাড়পুর ভ্রমণ করে আপনি বাংলাদেশের প্রাচীন সভ্যতার এবং বৌদ্ধ ধর্মের বিকাশ সম্পর্কে সরাসরি জানতে পারবেন এবং প্রাচীন স্থাপত্যের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন।

Unique Code wait
Next Post Previous Post